উপমহাদেশের পাক-ভারত বিভক্তির পরপর ১৯৪৭ সালের ২৬ নভেম্বর কুমিল্লাতে গবাদিপশু ও হাস-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং পোল্ট্রি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি স্থাপনের পর তড়কা, গলাফুলা, বাদলা ও মুরগির কলেরা রোগের টিকা উৎপাদন শুরু করে প্রায় ঐ সময়েই ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট যার উদ্দেশ্য ছিল মুরগির রাণীক্ষেত ও গবাদিপশুর রিন্ডারপেস্ট রোগের টিকা তৈরি করা। কিছুদিন পর ১৯৫৫-৫৬ সনে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় যার অধীন জলাতংক ও ক্ষুরারোগের টিকা উৎপাদন এবং হাস-মুরগি ও গবাদিপশুর রোগ অনুসন্ধান, পশুপাখির পুষ্টি ও কৃত্রিম প্রজনন ইত্যাদি শাখা নিয়ে মহাখালীতে প্রায় ৭ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
১৯৮৩-৮৪ সালে সকল টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সমূহকে (কুমিল্লার প্রতিষ্ঠান সহ) পরিচালক, গবেষণা প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন, প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী এর আওতায় আনা হয়। টিকা উৎপাদনের সাপোর্ট সার্ভিস হিসেবে কোয়ালিটি কন্ট্রোল শাখা, মিডিয়া ও সীড কালচার শাখা এবং এনিম্যাল রিয়ারিং শাখা সৃষ্টি করা হয়। এই সময় পোল্ট্রি ভ্যাকসিন শাখাকে পুনঃসংগঠনের মাধ্যমে ডাকপ্লেগ ও ফাউল পক্স শাখাকে পৃথক করা হয়। ইহা ছাড়া কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার এর পাশাপাশি ৯টি আঞ্চলিক রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশব্যাপি পশুপাখির রোগ অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ টক্সিকোলজি, প্যাথলজি, এক্টোপ্যারাসাইট, এন্ডোপ্যারাসাইট ও ভাইরোলজি শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন প্রাণিপুষ্টি শাখায় পশুপাখির খাদ্যের পুষ্টিমান যাচাই সহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আমাদের দেশে অনেক রোগ পশু হতে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকায় কিছু পশুরোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। এ সমস্ত জুনোটিক রোগ প্রতিরোধ জোরদার করার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত প্রাণিজাত খাদ্য ও ব্যবহার্য উপকরণ পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানের অধীন ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ শাখা তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে যে সকল লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও শাখা সমূহের কাঠামো বিন্যাস করা হয় তা মূলত (১) পশুপাখির রোগ নির্ণয়, (২) পশুপাখির রোগ ও পুষ্টি সংক্রান্ত গবেষণা উন্নয়ন, (৩) পশুপাখির টিকা উৎপাদনের মাধ্যমে রোগ দমন কার্যক্রমকে জোরদার করা এবং (৪) উল্লেখিত বিষয়সমূহ বাস্তবে ফলপ্রসু করার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।